দুনীর্তির অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সমবায় কর্মকর্তা মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 18 Mar, 2025
ডেস্ক রিপোর্ট:
চট্টগ্রামের সাবেক জেলা সমবায় কর্মকর্তা বর্তমান নোয়াখালী জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর। সমবায় অধিপ্তরের নিবন্ধক ও পরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম গত ০৯ মার্চ এই আদেশ দেন। এর আগে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে নিবন্ধন দেয়া, সমবায় সমিতির অভ্যন্তরে বিরোধ তৈরি, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মসহ জেলা সমবায় সমিতি কার্যালয়কে আওয়ামীকরণের অভিযোগ উঠে। এ প্রেক্ষিতে সমবায় অধিদপ্তর উপ নিবন্ধক ও যুগ্ননিবন্ধক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দু’দফা তদন্ত করা হয়। তদন্তে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে স্বেচ্চাচারিতা, সরকারী কাজে গা ফেলতি ও আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেআইনিভাবে হস্তান্তর, বিভিন্ন সমিতির অভ্যন্তরে বিরোধ তৈরি মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা আদায়, ভূঁইফোড় সমিতির নিবন্ধনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলি জানায়, মুরাদ আহম্মদ চট্টগ্রামে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসার হিসাবে যোগ দেন। এরপর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে একই ভবনের উপরে নীচে, পাশাপাশি রুমে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে তাঁকে ঘিরে অসৎ, দুনীর্তিবাজ চক্র গড়ে উঠে।
জেলা সমবায় অফিসার হিসাবে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর তিনি পদোন্নতি পেয়ে একই বছরের ০২ ডিসেম্বর জেলা সমবায় অফিসার, চট্টগ্রাম হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামের উপসহকারী নিবন্ধক হিসাবে বর্তমান সমবায় অফিসার কক্ষের পাশের রুমে কর্মরত ছিলেন।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ০৮ জুলাই ২০১৫ তারিখের ০৪.০০.০০০০.৫১৩.৩৫.০৩৭.২০১৫-১৯১ নম্বর পরিপত্র অনুযায়ী একই পদে তিন বছরের অধিককাল কর্মরতদের অন্যত্র বদলির বিধান থাকলেও এই কর্মকর্তা নিজেকে আওয়ামীলী নেতা হিসাবে দাবি করতেন এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা-এমপিদের সাথে ছবি তুলে সেগুলি পদ পদবীর কাজে ব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কাছে ছাত্রলীগ কর্মি বলে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সরকারি কর্মচারী হয়েও আওমীলীগ নেতা হিসাবে পরিচয় দিতেন এবং আওয়ামীলীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন, কারাগারে আটক রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসাবে বিভিন্ন অপকর্ম চালাতেন।
জেলা সমবায় কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি.( রেজি: নং-৬৩০৯, হাল-২২৫) একটি হাউজিং সমবায় সমিতি। উক্ত সমিতি কার্যকর থাকা অবস্থায় সমিতির পশ্চিম ষোলশহর মৌজায় শেরশাহ সাংবাদিক হাউজিং প্রকল্পে সমিতির কতিপয় সদস্য এবং প্লট ক্রয়কারীকয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়ে (২৫জনকে) ” শেরশাহ সাংবাদিক হাউজিং এলাকা প্লট মালিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লি:’ (রেজি: নং-৭২) নামে আরেকটি সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়ে সমিতির জমি-জমা নিয়ে বিরোধ তৈরি করে। পরষ্পর যোগসাজশের মাধ্যমে বৈধ সমিতির অফিসসহ বিভিন্ন সম্পত্তি তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। যার মুল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে মুরাদ আহম্মদ অর্থিক সুবিধা নেন বলেও অভিযোগ উঠে।
প্রায় ৪শ’ সাংবাদিকের আবাসন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর অফিসসহ সমিতির সম্পত্তি অসদস্যদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে ২০২২ সালের ১৫ মে, সমিতির সাবেক সম্পাদক হাসান ফেরদৌস’র পক্ষ থেকে জেলা সমবায় কর্মকর্তা, মুরাদ আহম্মদ বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় কার্যালয় ২৬জুন ২০২২ খ্রি; উপসহকারী নিবন্ধক মিন্টু বড়–য়ার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রহস্যজনক করন তদন্ত কার্যক্রম থেমে যায় এবং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তা মিন্টু বড়–য়া জানান, তাকে তদন্তে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হলেও সেচিঠি তাকে দেয়া হয়নি। বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে কর্মরত মিন্টু
বড়–য়া এক চিঠিতে বিষয়টি সম্পর্কে অবগতত নন বলেও জানান।
মিন্টু বড়–য়া (স্মারক নং ৮৪৭, ৩০/০৬/২০২৪ জেলা সমবায় কার্যালয়, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি) এক পত্রে জেলা সমবায় কার্যালয়, চট্টগ্রামকে জানান তিনি এবং যাদের কমিটির সদস্য করা হয়েছে তারা অবগত নন এবং তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত পত্র পাননি
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর বিপুল পরিমান সম্পদ, অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা বেআইনি হস্তান্তরের সাথে জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহম্মদসহ একটি চক্র জড়িত আছেন। যার কারনে তিনি তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র গুলি আরো জানায়, সমবায় সমিতি আইনে অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ১২০দিন। মুরাদ আহম্মদ চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. সহ বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে আয়োজনে নানা জটিলতা তৈরি করে তাঁর অনুগতদের দিয়ে অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি আইন লংঘটের সুনিদিষ্ট তথ্য তদন্তে পাওয়া যায়। এরমাধ্যমে বিভিন্ন সমিতিতে বিরোধী তৈরি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হতেন বলেও অভিযোগ উঠে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ এক যুগের বেশি একই ভবনে কাজ করার সবাধে মুরাদ আহম্মদকে ঘিরে জেলা সমবায় কার্যালয়ে একটি দুষ্ট চক্র গড়ে উঠে বলে নাম প্রকাশে কর্মকর্তারা জানান। তারা জানিয়েছেন, চক্রটি সমবায় কার্যালয়ের নানা অনিয়ম-দুনীর্তির সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সমবায় অধিদপ্তরের আইন শাখার উপ নিবন্ধক কামরুজ্জামান মুরাদ আহম্মদের বিভিন্ন অনিয়ম দুনীর্তি তদন্ত করে ২০২৩ সালের সেপ্টম্বরে তদন্ত প্রতিদেন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন সুপরিশের প্রেক্ষিতে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ধূর্ত এই কর্মকর্তা তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের কাছে তদবির করেন। তার তদবিরের প্রেক্ষিত্রে ফাইল চাপা পড়ে যায়।
২০২৪ সালে ছাত্রগণ অভ্যুত্থারেন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গতি ফিরে আসে সমবায় অধিদপ্তরে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সমবায় অধিদপ্তর। এর অংশ হিসাবে মুরাদ আহম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে নোয়াখলীতে পাঠানো হয়। গত ৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের নির্দেশ দেয়া হয়। ##
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
